শ্যামনগরে জীবন সংগ্রামী ৫ জয়িতার গল্প

আজিজুর রহমান, নিজস্ব প্রতিনিধি: “জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ শীর্ষক” কার্যক্রমের আওতায় সাতক্ষীরা শ্যামনগর উপজেলায় ২০২১ সালের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ৫ জয়িতার জীবন সংগ্রাম সাফল্য অর্জন করেছেন। স্বপ্নজয়ী সে সব জয়িতার স্বপ্নসিঁড়ির ইতিকথা পাঠকদের জন্য এখানে তুলেধরা হলো।
সফল জননী নারী কবিতা রানী মন্ডল:
কবিতা রানী মন্ডল (৫২)। শ্যামনগর উপজেলা কলবাড়ী গ্রামের মৃত বিলাশ চন্দ্র মন্ডলের স্ত্রী। তিনি ৩ পুত্র সন্তানের জননী। ২০২০ সালে রোড এক্সিডেন্টে তার স্বামী বিলাশ চন্দ্র মন্ডল মারত্মক আহত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। তারপর থেকে তার জীবনে নেমে আসে চরম বিপর্যয়। স্বামী নাবালক তিন সন্তান রেখে মৃত্যু বরণ করেন। মৃত্যুর সময় তিনি কোন জায়গা-জমি, অর্থ-সম্পদ কিছু রেখেযেতে পারেনি। মৃত্যুর পর কবিতা রানী সন্তানদের কিভাবে মানুষের মত মানুষ করবে তা নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ে। এরপর সে অন্যের বাড়ীতে ক্ষেতে, খামারে কাজ করে তাদের ভরনপোষন ও পড়া-লেখা করায়। অভাবের সংসারে যেখানে নিজেদের খাওয়া জোটেনা সেখানে সন্তানদের তিনি উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করতে মরিয়া হয়ে উঠেন। তার স্বামীর যখন মৃত্যু হয় বড় সন্তানের বয়স ১১ বছর, মেজ সন্তানের বয়স ০৬ বছর এবং ছোট সন্তানের বয়স ০২ বছর। এভাবে অনেক কষ্টের মধ্যে দিয়ে খেয়ে না খেয়ে বড় সন্তানকে ২০০৫ সালে এস.এস.সি পরীক্ষায় বসাতে সক্ষম হয়। বর্তমানে তারা সবাই সু-শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছে। বড় সন্তান খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় সহকারী পরিক্ষা নিয়ন্ত্রক পদে কর্মরত আছেন। মেজ সন্তান বর্তমানে অনার্স ৪র্থ বর্ষে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত এবং ছোট সন্তান বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুরে সাংবাদিকতা বিষয়ে ৩য় বর্ষে অধ্যায়নরত। নিরন্তর চেষ্টায় সন্তানদের সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরে দারুন খুশি তিনি।

অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী নারী রেকসানা পারভীন:
শ্যামনগর উপজেলা ঈশ্বরীপুর ইউনিয়নের শ্রীফলকাটি গ্রামের আরাফাত উদ্দীন গাজীর স্ত্রী রেকসানা পারভীন (৪৬)। দুই সন্তানের জননী রেকসানা পারভীনের বিয়ের পরে স্বামীর সংসারে এসে দু’বেলা খেতে পারতো না, থাকার মতো ঘরও ছিল না। স্বামীর সংসার থেকে ২০০৭ সালে সুশীলন নামে এনজিওর সাথে পরিচিত হয়। সুশীলন এনজিও প্রথমে তাকে পানি এবং পায়খানার উপর বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রদান করে। তারপর ২০০৮ সালে সুশীলণের পুষ্টি প্রকল্পে কাজ করে, ২০১০ সালে নকশি কাঁথা এনজিওতে কাজ করেন। পরবর্তীতে ব্র্যাক এনজিওর সহযোগিতায় প্রাক-প্রাথমিক স্কুলে ৫ বছরের জন্য নিয়োগ প্রাপ্ত হয়ে কাজ করে। তারপর উত্তোরণ এনজিওতে ১ বছর কাজ করে। ২০১৬ সালে ওয়ার্ল্ড ভিশন নবযাত্রা প্রকল্পে ইউএফ পদে ঈশ্বরীপুর ইউনিয়নে কাজ করতে থাকাকালীন কারিতাস থেকে ভামি কম্পোস্ট উৎপাদন করতে শুরু করি। প্রতি মাসে সে ভামি কম্পোষ্ট বিক্রি করে দুই হাজার টাকা আয় করে। তার ভামি কম্পোষ্ট উৎপাদন করা দেখে ওই গ্রামের প্রায় ৫০ জনের মতো ব্যক্তি ভামি কম্পোষ্ট উৎপাদনে আগ্রহী হয়েছে। ইতোমধ্যে তার এলাকায় ভামি কম্পোষ্টের ব্যবপক উৎপাদন শুরু হয়েছে। বর্তমানে স্বামী সন্তান নিয়ে সুখে আছেন রেকসানা পারভীন। নিজেকে গর্বিত বলে মনে করে রেকসানা পারভীন বলেন, আমি নিজের প্রচেষ্টায় একজন নারী হিসাবে অথনৈতিকভাবে সফলতা অর্জন করেছি। সে কারণে সরকার আমাকে জয়িতার পুরস্কার দিয়েছে। এ সফলতার জন্য আমি সকলের কাছে কৃতজ্ঞ।

- Advertisement -

শিক্ষা ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী নারী সালমা খাতুন:
শ্যামনগর উপজেলার ভ‚রুলিয়া ইউনিয়নের নাগবাটি গ্রামের মৃত মিজানুর রহমানের স্ত্রী সালমা খাতুন (২৯)। তার এস.এস.সি পাশ করার পরে সংসার জীবন শুরু হয়। সংসারে একটি ছেলে সন্তান হওয়ার পরে ২০১৮ সালের ফেব্রæয়ারী মাসে স্বামীর মৃত্যু হয়। সেখান থেকে সে অসহায় জীবন যাপন করে আসছিল। বর্তমানে সে হেলথ মাল্টি পারপাস ভলান্টিয়ার পদে কর্মরত আছে। শ্যামনগর উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর থেকে দর্জি প্রশিক্ষণ নিয়ে বাড়ীতে সেলাইয়ের কাজ করার পাশাপাশি তিনি তার নিজের লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছেন এবং নিজের সন্তানের ও লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছেন। বর্তমানে তার ইচ্ছা ছেলেকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে একটা ভাল চাকরি পাওয়ার। এ জন্য সে সকলের সহযোগিতা ও আর্শিবাদ কামনা করেছেন।

নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে সাফল্য অর্জনকারী নারী মোছাঃ মেহেরুন্নেছা:
নির্যাতিত অসহায় নারী মোছাঃ মেহেরুন্নেছা (৪১)। তিনি শ্যামনগর উপজেলার হায়বাতপুর গ্রামে মৃত আকবর হোসেনের কন্যা। অশ্রæশিক্ত নয়নের নিতি বলেন, আমার পিতা একজন গরীব মানুষ ছিলেন। আমার পিতা অনেক কষ্ট করে নবম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করিয়েছিলেন। নবম শ্রেণিতে পড়াবস্থায় আমার জীবনে নেমে এলো ঘণ কালো মেঘ। এই সময় আমার বিয়ে হয়। সে বিয়েটা হয় মতের বিরুদ্ধে। কারল আমার পিতার বিপদে ফেলে আমাকে জোর করে বিয়ে করে। এর পরে আমার জীবনে নির্যাতন শুরু হয়। স্বামী আমাকে দেখাশুনা করে না, পড়াশুনার খরচ ও দেয় না। এমতাবস্থায় খুব কষ্ট করে এস.এস.সিটা পাশ করি। এপর নির্যাতনের কারণে আর পড়াশুনা হলো না। গৃহে থাকা শুরু, গৃহে থাকতে থাকতে এক সময় হাফিয়ে উঠলাম। এই বার ভাবলাম যে নির্যাতনের হাত থেকে আমাকে বাহিরে বের হতে হবে। বাহিরে বিভিন্ন কাজের খোজ খবর নিতে শুরু করলাম এবং ভাবলাম যে আমাকে নতুন করে বাঁচতে হবে। পিছনে সব নির্যাতন ভুলে গিয়ে আমাকে সামনে এগুতে হবে। এই ভেবে আমি বিভিন্ন সংস্থা বা বিভিন্ন অফিসে কাজে খোজ নিতে লাগলাম। এই খোজ করার ফলে কিছু কিছু সংস্থায় বা কিছু অফিসে প্রশিক্ষণের কাজ পেলাম। সে সকল সংস্থার মধ্যে ১। আনসার ও ভিডিপিঃ আমি আনসারও ভিডিপি’র সদস্য বা দলনেত্রীতে আছি। আমি আসনার ও ভিডিপি’র মাধ্যমে ছেলে মেয়েদের বিভিন্ন কাজে পরিচর্যা বা তাদের উৎসাহ দেই। যেমন- দর্জি প্রশিক্ষণ, রাইফেল প্রশিক্ষন, বিল্ডিং তৈরীর প্রশিক্ষণ, কম্পিউটার প্রশিক্ষণ ও গ্রাম ভিত্তিক প্রশিক্ষণ ইত্যাদি। ২। নকশীকাঁথা মহিলা উন্নয়ন সংস্থাঃ এই সংস্থা থেকে আমি সেলই ও দর্জি প্রশিক্ষণ নিয়েছি। প্রশিক্ষণ নেওয়ার পরে আমি দর্জির কাজ করি। এই কাজ করে আমি কম-বেশি অর্থ উপার্জন করি এবং নকর্শীকাঁথার আওতায় আমার ৩০ জনের একটা সমিতি আছে। ৩। ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচী (সি.পি.পি)ঃ আমি সিপিপি’র সদস্য। আমাদের একটা টিম আছে। এই টিমের কাজ হলো ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, জলোচ্ছ¡াস, আমাদের আগম বার্তা মানুষের কাছে পৌছেদেওয়া। বিভিন্ন বিপদ আপদে স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে আমরা কাজ করি। ৪। ছাগল পালনের প্রশিক্ষণঃ আমি ছাগল পালন প্রশিক্ষণ নিয়েছি। এ থেকে আমি নিজেই ছাগল পালন করে আসছি। গত কয়েক বছরে আমি প্রায় ৫০ হাজার টাকার ছাগল বিক্রয় করেছি। বর্তমানে আমার আর্থিক অবস্থার উন্নতি ঘটেছে। বর্তমানে আমার সংসারে কোন অভাব নেই। নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে আমি নতুন উদ্যমে কাজ করছি। কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে সকল বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে সমাজে একজন সফল জয়িতা নারী হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছে বলে জানান।

সমাজ উন্নয়নে অসমান্য অবদান রেখেছেন শিরীন সীমা:
সমাজ উন্নয়নে অসমান্য অবদান রেখেছেন আটুলিয়া ইউনিয়নের বিড়ালক্ষী গ্রামের মৃত মুজিবর রহমানের কন্য শিরীন সীমা। তিনি তার সফলতার জীবন কাহিনীতে বলেন- আমি খুব গরীব মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে স্বপ্ন ছিল লেখাপড়া করে চাকরি করে নিজের পায়ে দাড়াবো পাশাপাশি সমাজে পিছিয়ে পড়া নারীদের নিয়ে কাজ করবো। আমি ছোট থেকে পড়াশুনার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের সেচ্ছাসেবীমূলক কাজ করতাম। আমি আমার এলাকায় মা ও শিশু পুষ্টু,বাল্যবিবাহ, যৌতুক, নারী নির্যাতন সহ এলাকার বিভিন্ন উন্নয়ন মূলক কাজ করতাম। সব সময় স্বপ্ন দেখতাম বড় হয়ে মানুষের জন্য কিছু করবো। একটা পর্যায়ে আমি নিজের এলাকা ছাড়িয়ে উপজেলা ভিত্তিক কাজ শুরু করলাম। আর আমার সব কাজে সহযোগিতা করছে শ্যামনগরের শ্রেষ্ঠ যুব সেচ্ছাসেবী সংগঠন সিডিও ইয়ুথ টিম। আমি সিডিও ইয়ুথ টিমের মাধ্যামে বিভিন্ন বিষয়ের উপর প্রশিক্ষন নিয়ে নিজেকে আরো দক্ষ করে গড়ে তুলি। কারো জন্য কিছু করতে পারলে যেন সর্গীয় সুখ অনুভব করি। হ্যা এটা সত্যি আমার টাকা পয়সা নেই কিন্তু ইচ্ছা শক্তিটা ছিল প্রবল। একটা মেয়ে হয়ে জম্ম নিয়েও সকল প্রতিবন্ধকতাকে পিছনে ফেলে নিজের বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করে লেখাপড়ার পাশাপাশি বিভিন্ন সমাজ সেবা মূলক কাজে নিজেকে যুক্ত করেছি। আর সেচ্ছাসেবী কাজে জীবনে কিছু পাই আর না পাই একটা জিনিস কিন্তু ঠিকই পেয়েছি সেটা হলো অসংখ্য মানুষের ভালবাসা আর এই ভালবাসাটায় আমার নতুন নতুন কাজের উৎসাহ যোগাতো। আমি সব সময় বিপদে মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করতাম আর তার এই সকল ভাবনার প্রেরনা যোগাত আমার বাবা। কিন্তু একদিন সেই স্বপ্নগুলো দুঃস্বপ্নে পরিনত হলো। জীবনের পথ দেখানো, মনে সাহস যোগানো মানুষটাকেই আমি আমার জীবন থেকে হারিয়ে ফেললাম। বাবাকে হারিয়ে আমি হতাশ হয়ে পড়ছিলাম। বাবাকে হারানোর কষ্টটা আমি আজও আমি ভুলতে পারিনি। বাবাকে হারিয়ে আমাদের সংসারে নেমে আসে দুঃখের কালো ছায়া। এমনও দিন গিয়েছে না খেয়ে দিন কাটাতে হয়েছে। আমি ভেবেই নিয়েছিল আমার জীবনটায় শেষ আর হয়ত সামনে এগিয়ে যেতে পারব না। তারপর ভাইয়ের অনুপ্রেরনায় অনেক কষ্ট করে টিউশুনি করে পড়াশুনা করি আর পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের স্বেচ্ছাসেবী কাজ করতে শুরু করি। কিন্তু মেয়ে হওয়ার কারনে আমাকে অনেক প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয়েছে। অনেকের খারাপ মনোভাবাপন্ন অনেক কথা শুনতে হয়েছে। জীবনে চলার পথে আমি নানা ধরনের বাধার সম্মুখীন হয়েছি। কিন্তু তাই বলে কি জীবন থেমে থাকবে। এমন অনেকেই আছেন যারা সব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে এগিয়ে যান সামনের দিকে। অর্জন করেন সফলতা। আমি ও সেই লক্ষ্য নিয়ে কাজ শুরু করলাম। আমি শ্যামনগর উপজেলার ১২ টি ইউনিয়নের মেয়েদের নিয়ে তৈরি করলাম সিডিও নারী উদ্যোক্তা উন্নয়ন কেন্দ্র নামে একটি সংগঠন যা গঠনের লক্ষ্য ছিল সমাজে পিছয়ে পড়া নারীদের সাবলম্বী করা, তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা ও কর্মসংস্থান তৈরি করা। তার পর ১২টি ইউনিয়ন ব্যাপি শুরু করলাম আমাদের কার্যক্রম। প্রথমে আমি তৈরি করলাম সিডিও মানবতার পাঠশালা। দরিদ্র পরিবারের ও সমাজে পিছিয়ে পড়া শিশুদের নিয়ে শুরু করলাম বিনা পারিশ্রমিকে শিক্ষা-পাঠাদান। কিন্তু এখানে ও বাধার সম্মুখীন হতে হয়। এলাকার মানুষের কন্যা সন্তানদের লেখা-পড়া করাতে বাধা সৃষ্টি করে। প্রতিদিনই আমি এলাকার প্রতিটি বাসায় যেতে সন্তানদের নিয়ে আসতাম আর তাদের অভিভাবকদের নানান স্বপ্নের কথা শুনাতাম। মেয়েদের সাফল্যের কথা ও শুনাতাম। এক পর্যায়ে তারা তাদের কন্যা সন্তানদের স্ব-ইচ্ছায় মানবতার পাঠশালায় পাঠাদানের জন্য নিয়ে আসলেন। গর্বে বুকটা ভরে উঠলো। কন্যা শিশুদের শিক্ষা গ্রহনের সুযোগ সৃষ্টি হলো। প্রায় শতাধিক শিশু মানবতার পাঠশালায় ভর্তি হয়ে শিক্ষা গ্রহনে সুযোগ পায়। আমি তখন মানবতার পাঠশালা নিয়ে আরও বড় স্বপ্ন দেখতে শুরু করলাম। উপজেলা ব্যাপি মানবতার পাঠশালা তৈরী করা পরিকল্পনা করলাম এবং কিছু টা সফলও হলাম। ৩টা ইউনিয়নে প্রায় তিন শতাধিক শিশু মানবতার পাঠশালায় শিক্ষা গ্রহন করে। গ্রামের অধিকংশ লোক অশিক্ষিত আমি তাদের ভিতর শিক্ষর আলো ছড়িয়ে দিতে তৈরি করলাম সিডিও বয়ষ্ক শিক্ষা নিকেতন। এছাড়াও গ্রামের মানুষের দারিদ্রতা কমিয়ে আনতে আমি পুরুষদের পাশাপাশি যদি নারীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে কাজ শুরু করলাম। যার ফলে পারিবারিক দারিদ্রতা কিছু হলেও কমবে। বাড়ির আঙ্গিনায় কিভাবে আধুনিক পদ্ধতিতে সবজি চাষ করা যায় সে বিষয়ে নারীদের প্রশিক্ষণ প্রদান করলাম। প্রায় ১০ জন নারী এখন স্বাবলম্বী। তারা এখন নিজ উদ্যোগে শাক-সবজির চাষ করে। তারপর আমি নিজ উদ্যোগে সিডিও আল্পনা সেন্টার নামে মেয়দের হাতের কাজের কার্যক্রম শুরু করি যেখানে আমি নকশিকাঁথা, হাতের কাজের জামা,বালিশের কভার রুমাল ইত্যাদি সহ কাগজের তৈরি বিভিন্ন ফুল তৈরি করি এবং সে গুলো বিক্রি করি। পরবর্তীতে এই কাজের সাথে আমি গ্রামের কিছু নারী ও কিশোরীদের ও যুক্ত করি। তারাও এখন হাতের কাজ করে নিজেদের সংসারে আর্থিক সাহায্য করতে পারছে। চলে গেছে তাদের পরিবারের অভাব-অনাটন। এই কাজ গুলো করতে গিয়ে আমাকে অনেক বার নিজের বাড়িতে নালিশ শুনতে হইছে। অনেকের কাছে ও হুমকির সম্মুখীন হয়েছি। তারপরও নিজের লক্ষ্য সর্বদা ঠিক রেখে কাজ করতে থাকতাম। আগে যারা আমাকে কটুকথা বলতো এবং হুমকিস্বরূপ কথা বলতো এখন তারা আমাকে তাদের সন্তাদের লেখাপড়া করানোর জন্য মানবতার পাঠশালাতে নিয়ে আসে। তাদের বাসার নারীদের কর্মসংস্থানের সৃষ্টির জন্য আমার কাছে পরামর্শ গ্রহন করে। এটাই তো আমার অনেক বড় পাওয়া। আমি এখন সবার কাছে একজন সমাজসেবী হিসাবে পরিচিত। আমার ইচ্ছাশক্তি প্রবল আরও বড় কিছু করতে চাই সমাজ উন্নয়নে। নিজেকে উৎসর্গ করতে চাই সমাজ উন্নয়নমূলক কাজে।

উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা শারিদ বিন শফিক জানান, সমাজের নানা প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে এগিয়ে চলেছে উপজেলার শ্রেষ্ঠ এই পাঁচ জন জয়িতা। তাদের সংগ্রাম অন্যান্য নারীদের জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে এবং সামনে পথ চলার প্রেরণা যোগাবে।

এই বিভাগের আরও সংবাদ