অস্তিত্ব প্রমাণে আমের ডিএনএ পরীক্ষা

গেল বছরের ৬ অক্টোবর আমের রাজা খ্যাত ফজলিকে রাজশাহীর নিজস্ব পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে জার্নাল প্রকাশ করে পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর। এরপর ফজলি আম নিজেদের অঞ্চলের দাবি করে আপত্তি জানায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার কৃষি অ্যাসোসিয়েশন। এই নিয়ে বাগড়া বাঁধে। এতে ফজলি আমের জিআই সনদ আটকে যায়। তবে কাল মঙ্গলবার (২৪ মে) শুনানির মধ্যে দিয়ে বিষয়টির নিষ্পত্তি করতে চায় অধিদপ্তর। অস্তিত্ব প্রমাণে ইতোমধ্যে ‘ফজলি’র ডিএনএ পরীক্ষাও করা হয়েছে। সব মিলিয়ে ফজলি কার জানা যাবে কাল। এই নিয়ে সবাই তাকিয়ে আছে কালকের দিকে। ফজলিকে নিজেদের বলে দাবি করে ফেসবুকে বাহাস চলছে এই দুই জেলার মানুষের মধ্যেও। রাজশাহী জেলা ফল গবেষণা কেন্দ্র জানায়, ২০১৭ সালের প্রথম দিকে বাঘার ফজলি আম-রাজশাহীর জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি চেয়ে তার জন্য আবেদন করে এই ফল গবেষণা কেন্দ্র। আবেদনের পর যাচাই-বাছাই শেষ করে সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর। এরপর গত বছরের ৬ অক্টোবর বাঘার ফজলি আমকে রাজশাহীর নিজস্ব পণ্য হিসেব স্বীকৃতি দেওয়া হয়। মূলত এরপরই বিপত্তি বাঁধে। এদিকে, রাজশাহীর বাঘার ফজলি আমের ইতিহাস জানতে পুরোনো কাগজপত্র খুঁজে ১৯১২ থেকে ১৯২২ পর্যন্ত করা সার্ভে অ্যান্ড সেটেলমেন্ট অপারেশনস ইন দি ডিস্ট্রিক অব রাজশাহীর চূড়ান্ত প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনের ১৬ নম্বর পৃষ্ঠায় ইংরেজিতে স্পস্টভাবে ‘দ্য বাঘা ম্যাংগো’ বা বাঘার আম লেখা আছে। যা কলকাতায় বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে বলেও উল্লেখ রয়েছে।

শুধু তাই নয় হ্যারিটেজ রাজশাহীর সভাপতি সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মাহবুব সিদ্দিকীর ‘আম’ বইটির অষ্টম অধ্যায়ে আমের জাত বিভাগে ৯৭ পৃষ্ঠার তথ্য অনুযায়ী বাঘার ফজলির পরিচিতি অন্তত ২০০ বছরের। এর আরেকটু পেছনে গেলে পাওয়া যায় প্রাচীন আমলের ইতিহাস। প্রায় ৫০০ বছর আগে রাজশাহীর বাঘায় নির্মিত এই ঐতিহাসিক মসজিদের অংশে টেরাকোটার কারুকাজেও দেখা মেলে আমের ছবি। স্থানীয় গবেষকদের মতে, কারুকাজ করা এই আম ফজলি আমেরই প্রতিচ্ছবি।
রাজশাহীর ফল গবেষক ড. হাবিবুল আলম বলেন, বাঘায় ৫০০ বছর আগে নির্মিত এই ঐতিহাসিক মসজিদের অংশে টেরাকোটার কারুকাজে যে আমের যে সাইজ বা আকৃতি রয়েছে তা ফজলি আমেরই প্রতিকৃতি। এর সঙ্গে তারা রাজশাহীর অন্য কোনো আমের মিল খুঁজে পাননি। আর চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে আমের যে জাতের কথা বলা হচ্ছে তার সঙ্গে রাজশাহীর বাঘার ফজলির স্বাদ, আকার-আকৃতি এবং ওজনসহ অনেক পার্থক্য রয়েছে।

- Advertisement -

ওই আমটি আসলে ভারতের মালদহের। আর ওই ফজলি ‘মালদহের ফজলি’ হিসেবে অনেক আগেই জিআই সনদ পেয়ে গেছে। মূলত এই মালদহের জিআই সনদ প্রাপ্তি মধ্যেই চাঁপাইনবাবগঞ্জের ফজলি আমের স্বত্ব হারিয়েছে। কেবল শুধু খাতা-কলমেই নয়, ভৌগলিক পরিচয় নিশ্চিত করতে ইতোমধ্যে রাজশাহীর বাঘার ফজলি আমের ডিএনএ নমুনা নিয়েও পরীক্ষা করা হয়েছে। যা ফল শনাক্তের ইতিহাসেও বিরল।

রাজশাহীর ফল গবেষণা কেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. হাসান ওয়ালিউল্লাহ বলেন, ফজলি রাজশাহীরই পণ্য এটা প্রমাণিত। ইতোমধ্যে সবকিছু উপস্থাপন করা হয়েছে। তাই এসব তথ্য প্রমাণের জোরেই ‘রাজশাহীর ফজলি আম’ ভৌগলিক নির্দেশক বা জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পাবে। রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কৃষিবিদ ড. আলীম উদ্দীন বলেন, ফজলি আম রাজশাহীর বাঘা উপজেলারই আম। তারা এজন্য তারা লড়ছেন। ভৌগলিক সীমানা নির্ধারণ ছাড়াও ফজলি আমের ডিএনএ সিকোয়েন্স জমা দেওয়া হয়েছে। জমা দেওয়ায় হয়েছে এর ইতিহাস ও সংস্কৃতিও। কাজেই ফজলি রাজশাহী জেলারই আম। আর তাই ফজলি রাজশাহীর পণ্য হিসেবে জিআই সনদ পাওয়ার অধিকার রাখে বলেও দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন।

এই বিভাগের আরও সংবাদ